ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিত: ৫:৩৬ পিএম, ৯-২-১৯
সনাতন ধর্মমতে, সরস্বতী জ্ঞান, বিদ্যা ও শিল্পকলার দেবী। জ্ঞান ও বিদ্যালাভের আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছরের মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতীর আরাধনা করেন। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাদা রাজহাঁসে চড়ে ও বীণা হাতে সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন।
বিদ্যার দেবী হওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতীর পূজা হয়। রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা সারা দেশের ন্যায় খুলনাতেও পালিত হয়েছে। প্রবর্তন পাঠকদের জন্য খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ট ৩টি বিদ্যাপীঠে পূজা উদযাপনের সংবাদ তুলে ধরা হল:
খুবিতে সরস্বতী পূজা উদযাপন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন মন্দির প্রাঙ্গণে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে।
রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানে পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. সমীর কুমার সাধুর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
প্রধান অতিথি এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেক ধর্মেই জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আলোকিত হওয়া এবং মনের অন্ধকার দূরীভূত করা। কোনো একটি দেশ সমৃদ্ধ হয়, তার ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে এসব উপাদান ও পরিবেশ বিদ্যমান।
তিনি বলেন, এবার পূজা উদযাপনে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি করা হয়েছে।
ফায়েক উজ্জামান বলেন, আমাদের সবার মূখ্য আরধ্য হওয়া উচিত আদর্শ মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে জ্ঞান সাধনা করা এবং সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের জন্যই আমরা যেন কাজ করতে পারি। এসময় তিনি আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে অনুষ্ঠানে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে মুদ্রিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান।
ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. শরীফ হাসান লিমনসহ সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সকালে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রতিমা বেদিতে অঞ্জলি প্রদান এবং পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পরে বাণী অর্চনা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কুয়েটে সরস্বতী পূজা উদযাপন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা পালিত হয়েছে।
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মুক্ত মঞ্চের সম্মুখে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদ্যাপন কমিটির সার্বিক আয়োজনে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, কর্মচারীসহ অন্যান্যরা শ্রী পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতবসনা, বাগ্দেবী সরস্বতী দেবীর শুভ আরাধনায় অংশ গ্রহণ করেন।
এ সময় পূজা মণ্ডল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনার ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. তারাপদ ভৌমিক, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মিহির রঞ্জন হালদার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া, আইইএম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত তলাপাত্র, পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, কোষাধ্যক্ষ রাজন কুমার রাহা, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিমা আনয়ন করা হয় এবং সোমবার সকালে প্রতিমা নিরঞ্জন দেয়া হবে। এছাড়া পূজা উপলক্ষে আরতি প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
যবিপ্রবিতে সরস্বতী পূজা উদযাপন
বাণী বন্দনা, পূজা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ এবং অসুস্থ একজন মেয়েকে আর্থিক সহায়তার মধ্য দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে যবিপ্রবির সনাতন পরিবারের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজা বন্দনায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। সরস্বতী পূজা উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।
সরস্বতীর পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. এম আর খান মেডিকেল সেন্টারের সামনে প্যান্ডেল করে পূজা অর্চনার ব্যবস্থা করা হয়। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে পূজা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। আজ রোববার সকাল সাতটার দিকে প্যান্ডেল স্থলে সরস্বতীর প্রতিমা স্থাপন করা হয়। সকাল আটটায় শুরু হয় পূজা অর্চনা। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয় পুষ্পাঞ্জলি। পুষ্পাঞ্জলি শেষে ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় প্রসাদ। ধীরে ধীরে সকল মত-পথের লোকজনের সমাগমে পূজা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় সম্প্রীতির মিলন মেলায়। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে আর্ত মানবতার সেবায় সাড়া দিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত চৌগাছার ইছাপুরের একটি মেয়েকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির সনতান পরিবারের সভাপতি ও এগ্রো প্রডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: ইকবাল কবীর জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো: নাজমুল হাসান, পরিচালক (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পূর্ত) পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, সনতান পরিবারের সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুমন চন্দ্র মহন্ত, যবিপ্রবির সিস্টেম এনালিস্ট সাগর চক্রবর্তী, কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুজন চৌধুরী, গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সমীরণ মন্ডল, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম সামিউল আলম প্রমুখ। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ধর্মীয় ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
এএস