ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ৬:১৫, ৮-২-১৯
ঢাকার বুকে লাল-সবুজে রাঙানো একেকটি রেলগাড়ি শাঁ-শাঁ করে ছুটে চলছে। এদের সামনের উপরিভাগে সবুজ আর নিচে রক্তলাল। দরজায় লাল, তার ওপরে সামান্য সাদার জমিনে সবুজের বিস্তৃত সরল রেখা। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত এসব ট্রেনে লাল-সবুজের ছোঁয়া আর স্নিগ্ধতা নিয়ে ঢাকাবাসী ভ্রমণ করছেন।
এই দৃশ্য এখন কল্পনা নয় বাস্তবতা। শুধুই সময়ের ব্যাপার। রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মাঠের কাজের পাশাপাশি জাপানে রেলকোচ র্নিমাণের কাজও শুরু হয়েছে।
মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি তাদের ফেসবুক পেজে ট্রেনের কোচগুলোর ছবি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল মক-আপ জাপানে পরিদর্শন এবং পর্যালোচনার জন্য প্রস্তুত।
সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেলের কোচের নকশায় ভেতর-বাইরের রং, আসন বিন্যাসের পরিকল্পনা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তৈরি হয়েছে রেপ্লিকাও। জাপানের কাওয়াসাকি-মিটসুবিসি কনসোর্টিয়ামের তৈরি রেপ্লিকাটি পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আগামী মার্চের মধ্যেই রেলকোচের নকশা চূড়ান্ত করে প্রতিষ্ঠানটিকে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর এগুলো তৈরি করলে কোচগুলো বাক্সবন্দী করে এনে বসিয়ে দেয়া হবে মেট্রোরেলের পথে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবেই আগাচ্ছে কাজ। বাকি অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে।
মেট্রোরেল চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। আর এতে রাজধানীর দুঃসহ যানজট পরিস্থিতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এই ট্রেন উত্তরা থেকে মিরপুর ১০ হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে যাবে মতিঝিলে।
আরো পড়ুন >>: জাতীয় পরিচয় পত্রের সব সেবা মিলবে এখন থেকে অনলাইনে
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক খান মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেলের কোচগুলো হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। ছয়টি বগির একেকটি ট্রেনে যাত্রী ধরবে এক হাজার ৭৩৮ জন। বগির উভয় পাশে দুটি করে মোট চারটি দরজা থাকবে। সিট বসানো হবে লম্বালম্বি। সাধারণ সিটের পাশাপাশি প্রতি বগিতে দুটি করে হুইল চেয়ার থাকবে। থাকবে স্মার্টকার্ড টিকিটিং পদ্ধতি।
তিনি বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ মেট্রোরেলের যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে। এরই মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আট ভাগে বিভক্ত মেট্রোরেলের কাজের তৃতীয় এই ভাগের ১২ কিলোমিটার পথে ৭৬৬টি পাইল ক্যাপের মধ্যে এরই মধ্যে বসানো হয়েছে ৩৬৩টি। আশা করছি, এই পথে চলতি বছরেই মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হবে। তবে কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিশেষ এই রেলপথে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৪০ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় ২৪টি ট্রেন চলবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এতে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জাইকা।
প্রকল্পটির প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু রুট নিয়ে নাগরিক সমাজের একাংশের আন্দোলনের কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কারণেও এই প্রকল্প আট মাস পেছায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
এএস