এম সাইফুল ইসলাম, Prabartan | আপডেট: ৯:২০, ২৩-০১-১৯
খুলনা: আমি এখন কার কাছে যাব? কে নেবে আমার দায়িত্ব! দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মেয়েটি বলল। গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। জমি বিক্রীর টাকায় বিয়ে হয়ে আসা পাখি কোন মুখে ফিরে যাবে দরিদ্র বাবার সংসারে । ক্লাস সেভেন অবধি পড়া নড়াইলের ছটফটে পাখি ( ছদ্মনাম) সংসার করতে এসেছিল খুলনার দৌলতপুরে। কৃষক বাবার পঞ্চম কন্যা সন্তান তিনি। স্বল্প পরিচিত শহুরে ছেলের হাতে কন্যা দায়মুক্ত হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তার বাবা মা। আর পাখি অভাব অনটনের সংসার থেকে মুক্ত হয়ে একবুক আশা নিয়ে বাসা বাঁধে আকাশে। স্বপ্ন ভাঙে অচিরেই। দিনের পর দিন নির্যাতনে, মাদকাসক্ত স্বামীর অত্যাচারে। সেই সাথে প্রতিদিন নির্যাতনের বিভৎস বৈচিত্র ।কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ পাখির। শরীরে অজস্র ব্লেডের কাটা দাগ নতুন পুরোনো, সাথে শরীরে নতুন প্রাণের স্পন্দন। বড় বেশি দেরি হয়ে যায়। চার মাসের অন্তসত্তা পাখি আপ্রাণ জীবনীশক্তি দিয়ে কামড়ে থাকে স্বামীর ঘর । শেষ রক্ষা হয়না মেয়েটির । নরপিচাশের উল্লাসে ধারাল ব্লেডের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত পাখির সারাটি মুখ। মেয়েটির পাশে এসে দাড়ায় খুলনা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার (ভিএসসি)।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ইমন নামে একজন মানসিক প্রতিবন্ধি শিশু রয়েছে। বাগেরহাটের মংলা থেকে হারিয়ে খুলনা আসে। শনিবার দুপুরে কেএমপি খানজাহানআলী থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারের পরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করে। বর্তমানে খুলনার সেন্টারে পুলিশের নিরাপদ হেফাজতে আছে মানসিক প্রতিবন্ধি এই শিশুটি।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে পুলিশ রিফর্মস প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে একটি করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পাশে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেনসহ ২২ জন জনবল বর্তমানে এ সেন্টারে সেবা দিচ্ছেন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের থাকার জন্য আটটি বেড রয়েছে, যার মধ্যে নারীর বেড সংখ্যা ৬টি। এখানে ৫ দিন পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশের পাশাপাশি মেরিস্টপ, ওয়ার্ল্ডভিশন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), অপরাজেয় বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মহিলা আইনজীবী সমিতি ও জেজেএস এই ৭টি এনজিও আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ করছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৩ সালে সেন্টারটি প্রতিষ্টার পর থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক নির্যাতিতা অসহায়দের সেবা দিয়ে আসছে। যার মধ্যে ২০১৩ সালে ৫ জন, ২০১৪ সালে ২০ জন, ২০১৫ সালে ৪৭ জন, ২০১৬ সালে ৮৯ জন, ২০১৭ সালে ৬৬ জন, ২০১৮ সালে ৭৩জন এবং ২০১৯ সালের চলতি মাসেই ২ জন সেবা নিয়েছেন।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর ফারাজানা ববি বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার যেসব দায়িত্ব পালন করে সেগুলো হচ্ছে- ভিকটিমকে সাদরে গ্রহণ করা। তার কথা মনযোগ দিয়ে ও সতর্কতার সাথে শোনা। অশ্লীলভাবে প্রশ্ন না করা বা অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করা। জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া। ভিকটিমকে আশ্বস্ব করা। অপরাধীকে বিলম্ব ছাড়াই আইনের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেবার মধ্যে রয়েছে- পাঁচ দিন বিনামূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। খাবার ও পোশাক দেওয়া হয়। ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। আইনী সহায়তার জন্য মহিলা আইনজীবী দ্বারা কাউন্সেলিং করা হয়। নারী পুলিশ দ্বারাপরিচালিত হওয়ায় শিশু ভিকটিমদের মাতৃস্নেহে লালন করা হয় এবং নারী ভিকটিমরা তাদের সমস্যা নিঃসংকোচে বলতে পারে। শিশুসহ মাকে আশ্রয় ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়।
কেএমপি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সোনালী সেন বলেন, শত শত অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারটি। তিনি আরো বলেন নারী পুলিশ ও সহযোগী এনজিওদের অংশীদারিত্বে সেবা দেওয়া হয়। সহযোগী এনজিও কর্তৃক পুনর্বাসন করা হয়। হারানো শিশুদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা না গেলে অথবা কোনো কারণে বৈধ অভিভাবক না পাওয়া গেলে সেন্টারটি থেকে এনজিওর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯
এএসএস/এএস