ডেস্ক রিপোর্ট, আপডেট: ০৭:৩২ পিএম, ২১-০১-২০১৯
দীঘিনালা থেকে সকাল নয়টায় শুরু হলো রাঙামাটির লংগদু উপজেলার উদ্দেশে যাত্রা। এক ঘণ্টার পথ। তাই আগেই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
লংগদুর হাসপাতাল ঘাটে অপেক্ষায় ছিল নৌকাটি। সে নৌকায় শুরু হলো আমাদের কাট্টলী যাত্রা। সঙ্গীরা কেউ নৌকার ছইয়ের ওপর আর কেউ নৌকার ভেতরে বসে পড়ল। আড্ডা জমতে সময় লাগল না। মুহূর্তেই সে আড্ডা রূপ নিল হইহুল্লোড়ে। কাপ্তাই হ্রদের গভীর জলরাশির বুক চিরে ছুটে চলেছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। কিছু দূর যেতে আবুলের টিলায় চোখে পড়ল শিকারের অপেক্ষায় মাচাংয়ে বসে
আছে অনেক পানকৌড়ি। হ্রদে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরায় মগ্ন জেলেরা।
আবুলের টিলা পেরিয়ে ফোরামুখ যেতেই একঝাঁক পাখি নৌকার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে নামল লেকের পানিতে। তারপর নৌকার ঢেউয়ে দোল খেতে খেতে ইচ্ছেমতো ভেসে বেড়াল।
সূর্য তখন পুবের আকাশে। তার আলো হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে পড়ে অন্য রকম রং পেয়েছে। রোদ-পানির মিতালি দেখতে দেখতে চলে আসি বৈদ্যের টিলায়। সেখানেও শামুকখোলের দল জায়গা করে নিয়েছে। হ্রদের মধ্যে জেগে ওঠা ছোট ছোট টিলায় মাছ শিকারের জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে তারা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির তো ওড়াউড়ি আছেই। সেসব পাখির ঝাঁক দেখে নৌকাবাসীরা সবাই উল্লসিত
হয়ে ওঠে। আবার হ্রদের মধ্যখানে জেলে নৌকাগুলো লেকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দু–তিনটি নৌকা একসঙ্গে করে জেলেরা জাল টানছেন।
ভ্রমণসঙ্গী আরমান খান জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পাখি এসেছে। আগে শিকারিদের উৎপাতের কারণে কয়েক বছর পাখি আসেনি। কিন্তু প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এখন শিকারিরা পাখি শিকারের সুযোগ পান না।
কাট্টলী বিল এখন পরিযায়ী পাখির রাজ্যকথা বলতে বলতেই পৌঁছে গেলাম কাট্টলী দ্বীপে। চারদিকে লেকের পানিবেষ্টিত কাট্টলী। দূর থেকে অপরূপ সুন্দর লাগে। কাট্টলীতে নৌকা ভিড়তেই নাকে এলে শুঁটকির গন্ধ। কাট্টলী বিলের পাড়ে শিকার করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সারি সারি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন শিশু বাড়ির সামনে মাচাংয়ের ওপর শুকাতে দেওয়া শুঁটকি নাড়াচাড়া করছিল।
কাট্টলীর জেলে আবদুল মজিদ জানালেন, এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দার প্রধান পেশা মাছ শিকার। এই মৌসুমে তাঁরা মাছ ধরে শুঁটকি করেন। উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরের দ্বীপ হওয়ায় সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো। নৌকায় ওঠার আগে কিছু শুঁটকিও কিনে ফেললাম। ফেরার সময়ও সেই একই দৃশ্য, যতই দেখি চোখের স্বাদ যেন মেটে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯
এএস/ডেস্ক