নিজস্ব প্রতিবেদক, আপডেট: ৬:১২ এএম, ২১-০১-২০১৯
শনিবার রাতে এশার নামাজ আদায় করে মিস্ত্রিপাড়া বাজার মসজিদ থেকে বের হয়ে দধি কিনে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন খাদেম মাসুদ গাজী। পথিমধ্যে সড়কের পাশে বসে থাকা কিছু বখাটে তাকে উদ্যক্ত করে। হাতে দই আছে, মিষ্টি নেই কেনো এই বলে কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে বখাটেরা তাকে মারধর করে। তিনি আহত হয়ে বাসায় ফিরে যান। বাসায় গিয়ে ঘটনা বলার পর ভাই ইয়াসিন গাজীকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে যান। এ সময় বখাটেরা স্থানীয় স্কুল গলির মুখে নিয়ে তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে এবং মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে থ্যাতঁলে দেয়। মাসুদ গাজির হাত পা ধরে রেখে তারা ইচ্ছেমতো মারতে থাকে। তার ভাই ইয়াসিন গাজী ঠেকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায় মাসুদ গাজী রক্তাক্ত হয়ে জ্ঞান হারালে তারা পালিয়ে যায়। দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। নিহত মাসুদ গাজী মসজিদের খাদেমের সঙ্গে রং মিস্ত্রি ও বিদ্যুতের কাজও করতেন। তিনি মহানগরীর পূর্ব বানিয়া খামার লোহারগেট নবম গলির বাসিন্দা মুনসুর রহমান গাজীর ছেলে।
বিষয়টি জানার পর পুলিশ খুনিদের গ্রেফতারে মাঠে নামে। কেএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম খুলনা সদর থানাকে কঠোর নির্দেশ দেন এ ঘটনায় জড়িতদের যে কোনো মূল্যে দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য। ইতিমধ্যে নিহত মাসুদ গাজীর ভাই ইয়াসিন গাজী বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ পেয়ে খুলনা সদর থানা পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনকেই গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের ভয়ংকর বর্ণনা দেয়। আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে তারা জানায় প্রথম দফায় তারা খাদেম মাসুদ গাজীকে অকারণেই মারপিট করে। কিছুক্ষণ পর মাসুদ গাজী তার ভাই ইয়াসিন গাজীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এলে তারা ৮/১০ জন মিলে দুজনকে বেধড়ক মরপিট করে। এক পর্যায়ে মৃত মনে করে রক্তাক্ত সংজ্ঞাহীন মাসুদ গাজীকে ফেলে পালিয়ে যায়।
পুলিশ গ্রেফতারের পর গতকাল সোমবার তাদের আদালতে প্রেরণ করে। মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম’র আদালতে তারা খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। এরপর আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করে। হত্যা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়া ভয়ংকর ৭ খুনি হচ্ছে আসামিরা হচ্ছেন- নগরীর নাজিরঘাট এলাকার মো. সগির হোসেনের পুত্র মো. সাগর হোসেন (২১), লবণচরার কৃষ্ণনগর এলাকার জি এম মাহাতাব হোসেনের পুত্র মো. আতিয়ার রহমান আতি (২২), পশ্চিম টুটপাড়ার মৃত সোবহানের পুত্র মো. নাসির উদ্দিন (২২), মিস্ত্রিপাড়া বাজারের মো. আবুল কালাম শেখের পুত্র মো. কাওছার শেখ (২৪), একই এলাকার মো. শাহ আলম আকনের পুত্র মো. সোহাগ আকন (২০), মো. খলিল শেখের পুত্র মো. ইমামুল শেখ ইমাম (১৭) এবং বাগমারা এলাকার মো. নান্না তালুকদারের পুত্র মো. নাজমুল তালুকদার (২২)।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলাম জানান, এজাহারভুক্ত ৮ আসামির মধ্যে ৭ আসামি আটক হয়েছে। অপর পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। দ্রুতই সে গ্রেফতার হবে। গ্রেফতারকৃত ৭ জন সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কোনো প্রকার পূর্ব বিরোধ ছাড়াই খাদেম মাসুদ গাজিকে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬, ২১ জানুয়ারী, ২০১৯
ডিএমআরএস/এএস