তামাকের ব্যাপারে আমরা আপসহীন

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২০:১২, ০৮-০৪-১৯

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা রয়েছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। সুতরাং তামাকের ব্যাপারে আমরা আপসহীন।

রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে তামাক বিরোধী সংগঠন অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মার সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি একথা বলেন। সেগুনবাগিচায় এনবিআর’র সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, তামাকের ব্যাপারে আমরা আপসহীন। যদিও এ খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব আসছে। তারপরও আমরা এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেবো না। ২০৪০ সালের মধ্যে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বো।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম সস্তা এবং তা ক্রমশ আরো সস্তা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল। একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে তামাকপণ্য ক্রয়ের সুযোগ থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো উচ্চস্তরের সিগারেট নিম্নস্তরে ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। অথচ মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.২ শতাংশ আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। এমতাবস্থায় তরুণ, নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তামাকের ছোবল থেকে সুরক্ষা দাবি জানানো হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় আত্মার প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন সাংবাদিক মনির হোসেন লিটন, কাওসার রহমান, মীর মাশরুর জামান রনি, মর্তুজা হায়দার লিটন, নাদিরা কিরণ, দৌলত আক্তার মালা, মিজান চৌধুরী প্রমুখ।

আত্মার পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং প্রস্তাবনার একটি কপি চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তামাকপণ্যে করারোপের জন্য প্রাক-বাজেট বৈঠকে ২০১৯-২০ বাজেট প্রস্তাব হিসেবে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়।

১. সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে দু’টিতে (নিম্ন এবং উচ্চ) নিয়ে আসা; ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এ দু’টি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; সবক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২. বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া; বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্তকরণ: ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির মতো ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

৪. সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা।

উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (১.৩ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ১.৯ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১২.৫ শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩.৪ শতাংশ হবে। দীর্ঘমেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপির ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top