রাফিয়ার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক!

ডেস্ক রিপোর্ট, prabartan | প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২৩- ০৩-১৯

সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয় রাফিয়ার মায়াবি হাসির ছবি। কেউ একজন রাফিয়ার সেই ছবি ফেসবুকে দেয়ায় সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংঝা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ঝিরঝিরিপাড়ার দিনমজুর আবদুল করিমের মেয়ে রাফিয়া (১০)। অভাবের কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সেই সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে শিশুটি। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি সে সৈকতের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঝিনুক বিক্রি করে। আর সেই আয় দিয়ে চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু রাফিয়ার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক!

অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে হলিউড-বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখছেন, কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার নায়িকা আলিয়া ভাট? অথবা কার হাসি বেশি সুন্দর মেহজাবিনের নাকি রাফিয়ার ইত্যাদি।

এটাই রাফিয়া ও তার পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে রাফিয়ার স্কুলে যাওয়া। এখন সে ঘরবন্দি। রাফিয়ার বাবা আবদুল করিম একজন দিনমজুর, তার মা রহিমা বেগম গৃহিণী। রাফিয়ারা দুই ভাই, দুই বোন। তাদের মধ্যে রাফিয়া মেজো, বড় ভাই আবদুল্লাহ্ নবম শ্রেণীতে পড়ে। রাফিয়া কলাতলির সৈকত প্রাইমারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তবে আপাতত তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

রাফিয়ার চাচা মহিউদ্দিন জানান, কোনো এক পর্যটক রাফিয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ কারণে রাফিয়া এখন স্কুলে যেতে পারে না। ঝিনুক নিয়ে যেতে পারে না সৈকতে। রাফিয়াকে সবাই চিনে ফেলায় তার সঙ্গে সেলফিতে মেতে ওঠে।

তিনি আরও জানান, অপহরণ অথবা অজানা কোনো এক ভয়ে দিন পার করছে রাফিয়ার পরিবার। তাই তাকে আপতত ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে।

রাফিয়ার মা রহিমা বেগম জানান, রাফিয়ার বাবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার ও অসুস্থ থাকায় রাফিয়া প্রতিদিন সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে যা আয় করত তা দিয়ে চলত তাদের সংসার। রাফিয়া গত এক সপ্তাহ যাবত ঝিনুক বিক্রি করতে না পারায় গত দুইদিন ধরে তাদের বাড়িতে চাল, ডাল কিছুই নেই। অভাবের সংসার দিনকে দিন আরও অভাবগ্রস্ত হচ্ছে। তবে অবুঝ মেয়ে রাফিয়া এসব কিছু মানতে রাজি নয়। সে তার বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে আবারও ঝিনুক হাতে ফিরতে চায় সৈকতে। যেতে চায় স্কুলে।

রাফিয়া জানায়, সে প্রতিদিন ঝিনুক বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করত। অভাবের সংসারের কথা মাথায় রেখে কখনও একটা টাকাও নিজে খরচ করত না। সব টাকাই মায়ের হাতে তুলে দিত। এ টাকা দিয়ে তার স্কুলের খরচ ও সংসারের খরচ চলত।

রাফিয়া আরও বলে, আমি ফেসবুক চিনি না, বুঝিও না। তবে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমাকে আর আমার পরিবারকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আমি পড়তে চাই। বাবার চিকিৎসা করাতে চাই। সংসার চালাতে চাই। আর এসব করতে গেলে আমাকে আগের মত ঝিনুক বিক্রি করতে সাগরে যেতে হবে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।

এ ব্যাপারে রাফিয়ার বাবা আবদুল্লাহ বলেন, রাফিয়ার আর সৈকতে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি এগিয়ে এসে তার পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তবে আমি তাকে স্কুলে পড়তে দেব, নয় তো আমার সাধ্য নেই।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top