এরদোগান বিষয়ে সুর পাল্টালেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ১৭:৪০, ২১-০৩-১৯

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের দেয়া বক্তব্যকে ‘হঠকারী’ ও ‘তীব্র আক্রমণাত্মক’ আখ্যায়িত করার একদিন পরই কথা পাল্টালেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

এরদোগানের মন্তব্যের কারণে দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন বললেও এখন বলছেন আঙ্কারার সঙ্গে ‘সম্পর্ক উন্নয়নে’ কাজ করছে তার দেশ। খবর গার্ডিয়ানের।

গত সোমবার তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কানাক্কাল প্রদেশে তুর্কি সেনাদের হাতে ব্রিটিশ সেনাদের পরাজয়ের বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশে এরদোগান বলেছিলেন, ক্রাইস্টচার্চের মতো তুরস্কে কেউ হামলা করতে আসলে তাকে কফিন নিয়ে ফেরত যেতে হবে, এ ধরনের ঘটনা আবার ঘটালে গ্যারিপলির পূর্বপুরুষদের মতো তাকেও কফিনে উঠতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯১৫ সালের তুর্কি সেনাদের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেনারাও অংশ নিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কি বাহিনীর সঙ্গে সমুদ্র তীরবর্তী শহরটিতে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আট হাজারের বেশি অস্ট্রেলীয় সৈন্য প্রাণ হারায়।

এরদোগানের এমন কঠোর বক্তব্যে পর ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।এমনকি দেশটিতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে তলবও করা হয়।

ক্যানবেরায় নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত কোরহান কারাকোচকে তলব করে মরিসন বলেছিলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে মন্তব্য করেছেন আমি তাকে অস্ট্রেলিয়ার জন্য অত্যন্ত আক্রমণাত্মক মনে করছি। স্পর্শকাতর এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত হঠকারিতামূলক ও বিপজ্জনক।’

তবে একদিন না পেরোতেই সে অবস্থান থেকে ফিরে আসলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, নির্বাচনী সমাবেশে এরদোয়ানের দেয়া বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন স্কট মরিসন।কিন্তু এর অল্প সময় পরই তিনি জানালেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ‘পুনঃনির্মাণে’ কাজ করছে সরকার।

অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিবাদের মুখে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। এরদোগানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এরদোগানের ওই কয়েকটি শব্দ আলোচনা বহির্ভূত ছিল। বিষয়টি মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপাও হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। সেইসঙ্গে তুরস্কের এই উদ্যোগকে, যাকে তিনি সংযত হওয়া বলছেন’ স্বাগত জানিয়েছেন স্কট মরিসন।

গার্ডিয়ান বলছে, পরবর্তীতে এই ইস্যুতে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেীলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

মঙ্গলবার তুরস্কের জঙ্গুলাডাক জেলায় এক নির্বাচনী জনসভায় এরদোগান বলেছিলেন, ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ এ হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হামলা। হামলাকারী দু’বার তুরস্ক এসে ৪৬ দিন অবস্থান করেছিল। তার আক্রমণের শিকার মুসলমানরা হলেও মূল টার্গেট তুরস্ক এবং ইউরোপে বসবাসকারী তুর্কি জনগোষ্ঠী।

তবে কেউ যদি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে হামলার চেষ্টা করে তাহলে হামলাকারীদের কফিন ফেরত পাঠানো হবে।

বর্বরোচিত এ হামলার বিচার যদি নিউজিল্যান্ড সরকার সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে তুরস্ক এর বিচার করবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।

কিন্তু পরের দিন অবশ্য নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যা বললেন এরদোগান

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্নের কাছ থেকে ইউরোপীয় নেতাদের সাহস, নেতৃত্ব ও আন্তরিকতা শেখার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।

মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য লেখা একটি নিবন্ধে এরদোগান ক্রাইস্টচার্চে হামলাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য লেখা ওই নিবন্ধে এরদোগান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্নের প্রশংসা করে বলেন, জাসিন্দা আরডার্নের আন্তরিক মনোভাব থেকে ইউরোপীয় নেতাদের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। নাগরিকদের প্রতি তার সমান দৃষ্টিভঙ্গিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও তা চর্চা করতে হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top