খুলনায় দীর্ঘদিন কলেজ সংসদগুলোতে নির্বাচন নেই

এম সাইফুল ইসলাম, prabartan | প্রকাশিত: ২২:২৭, ১২- ০৩-১৯

দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষা শেষে ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দেশের ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেয়। খুলনার বিভিন্ন কলেজের ক্যাম্পাসেও গত ক’ দিন ধরে ডাকসু নির্বাচন আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। একসময় খুলনা তথা সমগ্র দেশের রাজনীতিতে যারা ভূমিকা রাখতেন, তাদের বড় একটি অংশের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল খুলনার কলেজ গুলোতে ছাত্রনেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে খুলনার কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় তৈরী হচ্ছে না নতুন ও মেধাবী নেতৃত্ব।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কার্যকর নেই খুলনার কলেজগুলোর ছাত্রসংসদ। কোথায়ও দুই, কোথায়ও দেড় যুগ ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে বিভাগীয় সদর খুলনায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, বিনোদন, খেলাধুলা, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপনসহ কলেজের সার্বিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকাই থাকছে না। ছাত্র সংসদ না থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক সহাবস্থান নেই বলেও অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে খুলনার ছাত্র সংগঠনগুলোতেও মেধাবি নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে বলে অভিমত সাবেক ছাত্রনেতাদের। খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাস নগরীর দৌলতপুরের সরকারি বিএল কলেজ অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অক্সফোর্ড খ্যাত বলে পরিচিত এ কলেজে ছাত্র সংসদ নেই সুদীর্ঘ ২৬ বছর। এ ব্যাপারে কলেজ প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ২৫ সহস্রাধিক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলো হতাশ হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস শিবির নেতা মুন্সি আব্দুল হালিমের হত্যাকান্ডের পর বিএল কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আঘোষিত ভাবে বন্ধ হয়। ক্যাম্পাস চলে যায় যখন যে সরকার তাদের ছাত্র সংগঠনের দখলে।
আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদের অস্তিত্বও অনুরূপ। ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তৌহিদ, আরিফ, রায়হান পরিষদ ছিল সর্বশেষ। সেই থেকে এক যুগ নেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র সংসদ। কর্মাস কলেজে বর্তমানে একাদশ শ্রেণী থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পর্যন্ত ৪ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কলেজে অধ্যায়নরত মহানগর ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক এস এম রাজু হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন ছিলনা। আমরা ডাকসুর অপেক্ষায় ছিলাম। ডাকসু নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় আমরা খুব শীঘ্রই ছাত্র সংসদের দাবি জানাবো কতৃপক্ষের কাছে।

সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০০১ সালে। সে সময় বিএনপি সমর্থিত মিতা-লাভলী-তানিয়া প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল। ২০০২ সালের শেষের দিকে সংসদের মেয়াদ শেষ হলে বিলুপ্ত হয় কমিটি। অদ্যবধি, দীর্ঘ ১৫ বছর খুলনা মহিলা কলেজে ছাত্র সংসদ নেই। সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি বর্তমানে রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যক্ষ আফসানা হাসান ডেইজি বলেন, ছাত্রসংসদ না থাকায় মেধাবী নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। তিনি আরো বলেন নারীদের পক্ষে কথা বলতে অবশ্যই মহিলা কলেজে ছাত্র সংসদ দরকার। সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের ছাত্র সংসদ সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ৮ বছর আগে। নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের মনোনয়ন জমা না দিতে দেয়ার অভিযোগ সংগঠনটির। তাদের অভিযোগ-এ নির্বাচন ছিল লোক দেখানো। সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে ছাত্র সংসদ নেই অর্ধযুগের বেশি সময়। সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত মহিন, মঞ্জুর, সোহেল প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল। সে নির্বাচনেও মনোনয়ন পত্র জমা না দিতে দেয়ার অভিযোগে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলটি আদালত পর্যন্ত দৌড়ায়।

এছাড়া, দৌলতপুর (দিবা- নৈশ) ডিগ্রী কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ ছিল মহিউদ্দিন-হারুন প্যানেল ১৯৯২ সালে। ২৫ বছর যাবত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার জন্য কেউ নেই এ ক্যাম্পাসে। খুলনার একমাত্র সরকারি পলিটেকনিক কলেজটির ছাত্রসংসদ ছিল ২০০৬ সাল পর্যন্ত। উৎসব মুখর পরিবেশে হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল প্রায় দেড় যুগ আগে। নগর ছাত্রলীগ নেতা ও সোনাডাংগা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুম্মান হোসেন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাতে হয় তার জন্য কাজ করছি। চেষ্টা করছি খুলনার ক্যাম্পাসগুলো সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান আছে বলে তিনি দাবি করেন। বিএল কলেজের অধ্যক্ষ কেএম আলমগীর হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, চাইলেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যা সরকারি কলেজগুলো নিতে পারে না। তবে পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমরা অবশ্যই ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেব। তিনি আরো বলেন, ছাত্রসংসদ না থাকায় জাতীয় পর্যায়েও মেধাবি নেতৃত্ব তৈরি হয় না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইডেন মহিলা কলেজের ভিপি ছিলেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top